lawyer-keywords

পাওয়ার অব অ্যাটর্নি/আমমোক্তারনামা

খুব সাধারণ ভাবে বলতে গেলে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বা আমমোক্তারনামা হলো কোন ব্যক্তিকে কোন কাজ করার ক্ষমতা প্রদান করা অর্থাৎ কোন ব্যক্তিকে অন্য কোন ব্যক্তির পক্ষে কোন কাজ সম্পাদন করে দেওয়ার জন্য লিখিতভাবে ক্ষমতা প্রদান করাই হলো পাওয়ার অব অ্যাটর্নি। পূর্বে ১৮৮২ সালের আইন দ্বারা পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সম্পাদন করা হত। উক্ত আইন বাতিল করে ২০১৩ সাল হতে  পাওয়ার অব অ্যাটর্নি আইন, ২০১২ এর অধীনে বর্তমানে এটি সম্পাদন করা হয়। 

পাওয়ার অব অ্যাটর্নি আইন-২০১২ এর ২(১) ধারায় বলা হয়েছে, ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি অর্থ এমন কোনো দলিল- যাহার মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি তাহার পক্ষে ওই দলিলে বর্ণিত কার্যসম্পাদনের জন্য আইনানুগভাবে অন্য কোনো ব্যক্তির কাছে ক্ষমতা অর্পণ করেন’। এই দলিলের মাধ্যমে সম্পত্তি হস্তান্তর করা যায় না। তাই দলিল গ্রহিতা তার নিজ নামে সম্পত্তি নামজারি বা খারিজ করতে পারবেন না। অর্থাৎ এই দলিলমূলে কেউ সম্পত্তির মালিকানা দাবী করতে পারেন না, দলিল গ্রহিতা কেবল দাতার পক্ষে দলিলে উল্লিখিত কার্য সম্পাদন করতে পারেন। অনেকেই এই দলিলকে “আমমোক্তারনামা দলিল” বলে থাকেন। কিন্তু আইন ও বিধিমালার কোথাও “আমমোক্তারনামা” শব্দটি ব্যবহার করা হয়নি। তাই বাংলায় “পাওয়ার অব অ্যাটর্নি” কিংবা ইংরেজিতে “Power of Attorney” লেখাই যুক্তিযুক্ত।

স্ট্যাম্প আইনের ২(১১) ধারায় বলা হয়েছে যে, মোক্তারনামা এমন দলিল, যা একজন বিশেষ ব্যক্তিকে ওই দলিলের সম্পাদকের পক্ষে এবং নামে কাজ করার ক্ষমতা দেয়। ক্ষমতাপ্রদানকারী তার সব সম্পত্তি বা কোনো বিশেষ সম্পত্তি বা কোনো মামলায় তার পক্ষে যাবতীয় কাজ পরিচালনার জন্য পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বা মোক্তারনামা সম্পাদন করতে পারেন।

পাওয়ার অব অ্যাটর্নি/আমমোক্তারনামা হলো ব্যক্তিগত বিষয়ে, ব্যবসায় বা অন্য কোন আইনি বিষয়ে অন্য ব্যক্তিকে উপস্থাপন করা বা তার পক্ষ থেকে কাজ করার লিখিত অনুমোদন। কাউকে বিশেষ প্রয়োজনে নিজের যে ক্ষমতা তা দেওয়ার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। ধরা যাক আপনার কিছু সম্পত্তি রয়েছে ঢাকার বাইরে। কিন্তু আপনি এই জমি দেখাশোনা ও বিক্রি করার জন্য নিজে ঢাকার বাইরে যেতে পারছেন না। আপনি ইচ্ছা করলে যে কাউকে জায়গাজমি দেখাশোনার দায়িত্ব দিতে পারেন। শুধু জমিজমা-সংক্রান্ত নয়, যেকোনো কাজ আপনার অনুপস্থিতিতে সম্পাদনের জন্য ক্ষমতা অর্পণ করতে পারেন। দায়িত্ব বা ক্ষমতা অর্পণের জন্য পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বা আমমোক্তারনামা করতে হবে। তা হতে হবে লিখিত। এটি একটি আইনগত দলিল। যাকে মোক্তার নিয়োগ করা হলো তিনি মূল মালিকের পক্ষে কোনো সম্পত্তির দান, বিক্রি, হস্তান্তর, রক্ষণাবেক্ষণ, বন্ধক রাখা, খাজনা ইত্যাদি কাজ করে থাকেন। এতে মোক্তারনামা দলিলে এসব বিষয়ে শর্ত স্পষ্ট করে লেখা থাকতে হবে যে তাঁকে পাওয়ার দেওয়া হলো তিনি কী কী করতে পারবেন কিংবা পারবেন না।

প্রকারভেদ

পাওয়ার অব অ্যাটর্নি আইন-২০১২ ও পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বিধিমালা-২০১৫ এর সমন্বিত পাঠে তিন প্রকারের পাওয়ার অব অ্যাটর্নির বা মোক্তারনামার অস্তিত্ব পাওয়া যায়। যা হলো:

   ১. সাধারণ পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বা আমমোক্তারনামা;

   ২. অপ্রত্যাহারযোগ্য পাওয়ার অব অ্যাটর্নি; এবং  

   ৩. বিশেষ পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বা খাস মোক্তারনামা

যে আমমোক্তার নামার মাধ্যমে মোক্তার দাতার পক্ষে জমি-জামা ক্রয়, বিক্রয় রক্ষণা-বেক্ষন, চুক্তিপত্র করা, মামলা মোকাদ্দমা পরিচালনা করা সহ যাবতীয় কাজের ক্ষমতা মোক্তার কে দেওয়া হয় তাকে জেনারেল পাওয়ার অব এটর্নী বা সাধারণ মোক্তারনামা বলে ।  

অন্যদিকে একটি নির্দিষ্ট বা কোনো বিশেষ কাজের ক্ষমতা  অর্পন করা হলে তাকে, স্পেশাল পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বা খাস মোক্তারনামা বলে। সাধারণত যেসকল আমমোক্তারনামা স্থাবর সম্পত্তি বা জমিজমা হস্তান্তরের সঙ্গে জড়িত নয়, সেগুলো নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে নোটারি করে নেওয়া যায়। কিন্তু স্থাবর সম্পত্তি বা জমিজমা সংক্রান্ত আমমোক্তারনামা অবশ্যই রেজিস্ট্রি করতে হবে। অন্যথায় হলে এর আইনগত ভিত্তি থাকবে না। মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে আদালতের অনুমতি নিয়ে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি এর মাধ্যমে অন্যজন কে দায়িত্ব দেওয়া যায়।দলিলের ধরন অনুযায়ী নির্দিষ্ট মূল্যের নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে আমমোক্তারনামা সম্পাদন করতে হবে।   

যেসকল আমমোক্তারনামা রেজিস্ট্রেশন করা বাধ্যতামূলক, এরুপ আমমোক্তারনামা সম্পাদনের তিন মাসের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। মোক্তারনামা দাতার সম্পত্তি যেখানে থাকুক না কেন, দাতা যেখানে বসবাস করেন সে জেলার রেজিস্ট্রি বা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।

অপ্রত্যাহারযোগ্য পাওয়ার অব অ্যাটর্নি 

পাওয়ার অব অ্যাটর্নি আইন, ২০১২ এর ২ (৪) ধারা অনুসারে, “অপ্রত্যাহারযোগ্য পাওয়ার অব অ্যাটর্নি” অর্থ স্থাবর সম্পত্তি বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে, বিক্রয় চুক্তি সম্পাদনের বা ঋণ গ্রহণের বিপরীতে স্থাবর সম্পত্তির বন্ধক প্রদানের জন্য প্রদত্ত কোন পাওয়ার অব অ্যাটর্নি অথবা স্থাবর সম্পত্তির বিপরীতে পণ মূল্য গ্রহণের বিনিময়ে ভূমি উন্নয়নসহ উক্ত দলিল সম্পাদনের ক্ষমতা প্রদান সম্পর্কিত কোন পাওয়ার অব অ্যাটর্নি। 

অপ্রত্যাহারযোগ্য পাওয়ার অব অ্যাটর্নি (পণমূল্যের বিনিময়ে) দলিলের রেজিস্ট্রি খরচসহ অন্যান্য তথ্য: 

রেজিস্ট্রেশন ফি: দলিলে উল্লিখিত পণমূল্যের ২% টাকা। তবে ১০০ টাকার নিম্নে কিংবা ৪০,০০০ টাকার উর্ধে হবে না। দলিলের মূল্য ২৪,০০০ টাকা বা তার কম হলে নগদ অর্থে এবং ২৪,০০০ টাকার বেশি হলে স্থানীয় সোনালী ব্যাংক লিঃ এ, কোড নং ১-২১৬১-০০০০-১৮২৬ তে জমা করে পে-অর্ডারের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে।

স্টাম্পশূল্ক: দলিলে উল্লিখিত পণমূল্যের ৩% টাকা। তবে ৬০০০ টাকার নিম্নে এবং ৬০,০০০ টাকার উর্ধে হবে না (১৮৯৯ সালের স্টাম্প আইনের ১ নম্বর তফশিলের ৪৮ডি নম্বর ক্রমিকে উল্লিখিত বর্ণনা অনুসারে)। দলিলে সর্বোচ্চ ১২০০ টাকার নন-জুডিসিয়াল স্টাম্প ব্যবহার করা যাবে। স্টাম্প খাতের বাকি অর্থ স্থানীয় সোনালী ব্যাংক লিঃ এ কোড নং ১-১১০১-০০২০-১৩১১ তে জমা করে পে-অর্ডারের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে।

এছাড়া পণমূল্যের বিনিময়ে অপ্রত্যাহারযোগ্য পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দলিল রেজিস্ট্রি করতে যা যা লাগবে–

১) ২০০ টাকার স্টাম্পে হলফনামা।

২) ই- ফিঃ- ১০০ টাকা।

৩) এন- ফিঃ-

(i) বাংলায় প্রতি ৩০০ (তিন শত) শব্দ বিশিষ্ট এক পৃষ্ঠা বা উহার অংশ বিশেষের জন্য ১৬ টাকা।

(ii) ইংরেজি ভাষায় প্রতি ৩০০ (তিন শত) শব্দ বিশিষ্ট এক পৃষ্ঠা বা উহার অংশ বিশেষের জন্য ২৪ টাকা।

৪) (নকলনবিশগনের পারিশ্রমিক) এনএন ফিসঃ-

(i) বাংলায় প্রতি ৩০০ (তিনশত) শব্দ বিশিষ্ট এক পৃষ্ঠা বা উহার অংশ বিশেষের জন্য ২৪ টাকা।

(ii) ইংরেজি ভাষায় প্রতি ৩০০ (তিনশত) শব্দ বিশিষ্ট এক পৃষ্ঠা বা উহার অংশ বিশেষের জন্য ৩৬ টাকা।

৫) সম্পত্তি হস্তান্তর নোটিশের আবেদনপত্রে ১০ টাকা মূল্যের কোর্ট ফি।

মন্তব্য:

১) এন- ফি ও ই- ফি, রেজিস্ট্রেশন ফি এর সাথে পে-অর্ডারের মাধ্যমে কোড নং ১.২১৬১.০০০০.১৮২৬ তে জমা করতে হবে।

২) এনএন- ফি নগদে রেজিস্ট্রি অফিসে জমা করতে হবে।

৩) সরকার নির্ধারিত হলফনামা, ২০০ টাকার স্টাম্পে প্রিন্ট করে মূল দলিলের সাথে সংযুক্ত করতে হবে।

বিঃদ্রঃ ১। অপ্রত্যাহারযোগ্য পাওয়ার অব অ্যাটর্নি রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন আইন ১৯০৮, এর ৫২এ ধারা প্রযোজ্য।

২। সিটি কর্পোরেশন বা জেলা সদরের পৌরসভার অন্তর্ভুক্ত এক লক্ষ টাকার অধিক মূল্যের পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দলিল রেজিস্ট্রির ক্ষেত্রে ই-টিন বাধ্যতামূলক।

৩। পণমূল্য হচ্ছে– কোন ভূমি উন্নয়নের নিমিত্ত অপ্রত্যাহারযোগ্য পাওয়ার গ্রহিতা যে অংশ বিক্রয় বা হস্তান্তরের ক্ষমতা প্রাপ্ত হন উহার বাজার মূল্য এবং পাওয়ার দাতা কর্তৃক গৃহীত কোন অর্থ, যদি থাকে, যাহা দলিলের মূল্য হিসেবে গণ্য হয়।

৪। পাওয়ার অব অ্যাটর্নির মাধ্যমে ক্ষমতা অর্পনে সীমাবদ্ধতাঃ পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বিধিমালা, ২০১৫ এর ৪ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, আইনের উদ্দেশ্য পুরনকল্পে, এই বিধিমালার অধীন পাওয়ার অব অ্যাটর্নির মাধ্যমে নিম্নবর্ণিত বিষয়ে কোন ক্ষমতা অর্পণ করা যাবে না, 

যথা-

  • উইল সম্পাদন, বা দাতা কর্তৃক সম্পাদিত উইল রেজিস্ট্রির উদ্দেশ্যে দাখিলকরন;
  • দত্তক গ্রহনের ক্ষমতাপত্র সম্পাদন; বা দাতা কর্তৃক সম্পাদিত দত্তক গ্রহনের ক্ষমতাপত্র রেজিস্ট্রির উদ্দেশ্যে দাখিলকরন;
  • দান বা হেবা সম্পর্কিত ঘোষণা সম্পাদন;
  • ট্রাস্ট দলিল সম্পাদন; এবং
  • সরকার কর্তৃক, সাধারণ বা বিশেষ আদেশ দ্বারা, ঘোষিত অন্য প্রকার দলিল বা কার্য সম্পাদন।

৫। রেজিস্ট্রেশন আইনের ৫২এ ধারা নিম্নরূপঃ

কোনও স্থাবর সম্পত্তির বিক্রয় দলিল দাখিল করা হলে, যে পর্যন্ত নিম্নবর্ণিত বিবরনাদি দলিলে অন্তর্ভূত এবং দলিলের সহিত সংযুক্ত না করা হয়, সেই পর্যন্ত নিবন্ধনকারী কর্মকর্তা দলিলটি নিবন্ধন করবেন না, যথা-

(ক) বিক্রেতা যদি উত্তরাধিকারপ্রাপ্তি ব্যতিত অন্যভাবে সম্পত্তির মালিক হইয়া থাকেন, তাহলে “রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন, ১৯৫০” এর অধীন তার নামে প্রস্তুতকৃত সর্বশেষ খতিয়ান;

(খ) বিক্রেতা যদি উত্তরাধিকার প্রাপ্তিতে সম্পত্তির মালিক হয়ে থাকেন, তাহলে রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন, ১৯৫০ এর অধিন তার নামে অথবা তার পূর্বসূরির নামে প্রস্তুতকৃত সর্বশেষ খতিয়ান;

(গ) সম্পত্তির প্রকৃতি;

(ঘ) সম্পত্তির মূল্য;

(ঙ) সীমানা ও চৌহদ্দিসহ সম্পত্তির একটি নকশা;

(চ) সম্পত্তির মালিকানার গত ২৫ (পঁচিশ) বৎসরের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা; এবং

(ছ) এই দলিল সম্পাদনের পূর্বে সম্পাদনকারী সম্পত্তিটি কোন ব্যক্তির নিকট হস্তান্তর করেন নাই এবং উহাতে তাহার বৈধ স্বত্ব বহাল আছে মর্মে দৃঢ়ভাবে ঘোষনা করিয়া একটি হলফনামা;

৬। স্ট্যাম্প আইন, ১৮৯৯ এর ৫ নম্বর ধারায় Instruments relating to several distinct matters প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, Any instrument comprising or relating to several distinct matters shall be chargeable with the aggregate amount of the duties with which separate instruments, each comprising or relating to one of such matters, would be chargeable under this Act.

পাওয়ার অব অ্যাটর্নির জন্য যে সকল বিবরণ অন্তভূর্ক্ত করতে হবে

পাওয়ার অব অ্যাটর্নির মাধ্যমে ক্ষমতা অর্পনের ক্ষেত্রে ইহাতে নিম্নবর্ণিত সকল বিষয় বা প্রয়োজনীয় বিষয়ের বিবরণ অন্তভূর্ক্ত করতে হবে যথা-  

১। পাওয়ারদাতার উদ্দেশ্য;  

২। পাওয়ার গ্রহীতার দায়িত্ব,ক্ষমতা ও সীমাবদ্ধতা;

৩। পাওয়ার অব অ্যাটর্নির নিদ্দিষ্ট মেয়াদ;

৪। প্রদিয় ক্ষমতা শর্তাধীন হলে সেই শর্তের সুস্পষ্ট বিবরণ;

৫। ক্ষমতা প্রদানের বা নির্বাহের বিবরণ, যদি ইহা একাধিক ব্যাক্তি কর্তৃক যৌথভাবে বা পৃথক ভাবে সম্পাদিত হয়;

৬। আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত বিষয়ের বিবরণ;

৭। স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তির বিবরণ;  

৮। রেজিস্ট্রেশন আইনের ধারা ৫২ (ক) তে বিধৃত বিষয়ের বিবরণ, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে।

‘ফরেন পাওয়ার অব অ্যাটর্নি‘ যেভাবে করবেন

যেহেতু পাওয়ার অব অ্যাটর্নি একটি আইনগত দলিল, কাজেই এটি অবশ্যই লিখিত হতে হবে। বিদেশে থাকাবস্থায় কোনো ব্যক্তি কাউকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিতে চাইলে তাঁকে প্রথমে একজন ভালো আইনজীবীর মাধ্যমে দলিলটি সঠিকভাবে ড্রাফট করাতে হবে। এরপর সে দেশের দূতাবাসের মাধ্যমে দলিলটি সম্পাদন ও প্রত্যয়ন করে পাঠাতে হবে। তাঁকে ওই দেশে বাংলাদেশের দূতাবাসের কনস্যুলারের সামনে দলিলে সই করতে হবে এবং কনস্যুলারের মাধ্যমে তা সত্যায়িত হওয়ার পর ক্ষমতাদাতা অর্থাৎ প্রবাসি ব্যক্তি ক্ষমতাগ্রহীতা বা আমমোক্তার বরাবরে পাঠিয়ে দেবেন। ওই পাওয়ার অব অ্যাটর্নি পাওয়ার পর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক সত্যায়িত করতে হবে।

পরে তা জেলা প্রশাসকের রাজস্ব কার্যালয়ে জমা দিতে হবে। এরপর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে বিদেশে সম্পাদিত আমমোক্তারনামা দলিলে বর্ণিত সম্পত্তিতে সরকারি স্বার্থ জড়িত আছে কি না, তার তথ্য এবং দাগ–সংক্রান্ত তথ্যসম্পর্কিত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর চিঠি প্রেরণ করবেন এবং আরেকটি চিঠি প্রেরণ করবেন সহকারী সচিব (কনস্যুলার) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর।

জেলা প্রশাসকের রাজস্ব কার্যালয়ে সব তথ্য আসার পর, সেখান থেকে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যের স্ট্যাম্প লাগাতে হবে এবং সেখানে আমমোক্তারনামা দলিলের ওপর একটি নম্বর ও তারিখ পড়বে। এ রকম বিদেশি আমমোক্তারনামার সত্যতা যাচাই করতে হলে জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কার্যালয়ে গিয়ে ওই নম্বর দিয়ে যাচাই করে নেওয়া যায়। এরপর এই পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সংশ্লিষ্ট সাবরেজিস্ট্রি অফিসে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। 

সতর্কতা 

পাওয়ার অব অ্যাটর্নির ক্ষেত্রে সবচেয়ে প্রধান যে বিষয়ে তা হচ্ছে, যে ব্যক্তিকে মোক্তার করা হচ্ছে, তিনি কতটা বিশ্বস্ত, সে বিষয়ে সতর্ক থাকা। অনেক সময় দেখা যায়, মোক্তার নিজের নামে কিংবা প্রতারণামূলকভাবে জায়গাজমি হস্তান্তর বা বিক্রি করে দেন। তখন মূল মালিক বিপদে পড়েন। এ নিয়ে মামলা-মোকদ্দমাও কম হয় না। তাই দলিলের শর্তগুলো স্পষ্ট করে লেখা থাকতে হবে। যাঁকে পাওয়ার দেওয়া হলো তাঁর সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখাও মালিকের দায়িত্ব।

পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বাতিলের পদ্ধতি 

  • মোক্তারনামা নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য করা হলে মেয়াদ শেষে বাতিল বলে গন্য হবে;
  • মোক্তারনামা নির্দিষ্ট কোনো কার্যের জন্য করা হলে ঐকাজ সমাপ্তিতে তা বাতিল বলে গন্য হবে;  
  • যৌথ ক্ষমতার মোক্তারনামার পক্ষদের একজনের মৃত্যুতে তা বাতিলবলে গন্য হবে;  
  • মোক্তারনামা দাতা কোনো মোক্তারনামা বাতিল করতে ইচ্ছুক হলে যে রেজিস্ট্রি অফিসে মোক্তারনামা টি তস্দিক করা হয়েছিল সে স্থানের জেলা রেজিস্ট্রারের (ডি.আর) বরবরে মোক্তারনামা রদের জন্য আবেদন করতে হবে । মোক্তারনামার উপর তিনি “রদ করা“ কথাটি লিখে দিবেন এবং সে মোতাবেক রেজিস্টার সংশোধন করবেন । রেজিস্ট্রি অফিসার মোক্তারনামা বাতিলের আবেদন পাবার পর তার জেলার সকল রেজিস্ট্রারিং অফিসে বা অন্য কোনো জেলার সদর অফিসকে বিষয়টি নোটিশের মাধ্যমে জানিয়ে দিবেন । নোটিশ জারীর ডাক টিকেটের খরচ আবেদন কারী বহন করবেন;  
  • চুক্তি অনুযায়ী আবাসন কোম্পানি দলিলের শর্ত ভঙ্গ করলে পর পর তিনটি নোটিশ করে জমির মালিক রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে সেই দলিল বাতিল করতে পারবেন। (পাওয়ার অব অ্যাটর্নি আইন, ২০১২)
  • তবে স্বার্থের সাথে যুক্ত মোক্তারনামা স্বার্থ পূর্ণ বা পরিত্যক্ত না হওয়া পর্যন্ত বাতিল করা যায় না।