টিন/টিআইএন (TIN) হচ্ছে একটি বিশেষ নম্বর বিশিষ্ট সার্টিফিকেট যা সংশ্লিষ্ট কর অফিস প্রদান করে থাকে। কর প্রদান করা ছাড়াও বিভিন্ন প্রয়োজনে টিন সার্টিফিকেট প্রয়োজন পড়ে। সংশ্লিষ্ট কর অফিসে নির্দিষ্ট আবেদন ফরমের মাধ্যমে এটি নিতে হয় অথবা অনলাইনে E-TIN সার্টিফিকেটও নেওয়া যায়। করদাতা হিসাবে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া দ্রুত ও সহজতর করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ই-টিন (e-TIN) রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি প্রবর্তন করেছে। এ পদ্ধতিতে কয়েকটি সহজ ধাপ শেষ করে অনলাইনের মাধ্যমে আপনি একটি নতুন টিন সার্টিফিকেট পেতে পারেন। বর্তমানে যাদের টিন/টিআই এন আছে, তাঁদেরকেও নতুন পদ্ধতির টিআইএন এর জন্য রি-রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।
ই-টিআইএন হলো আয়কর নিবন্ধনের আধুনিক সংস্করণ। একজন করদাতাকে আয়কর নিবন্ধন নম্বরের মাধ্যমে করদাতা হিসেবে শনাক্ত করা হয়। নিবন্ধিত করদাতা বছর শেষে রিটার্ন জমা দেওয়ার মাধ্যমে বার্ষিক আয়-ব্যয় ও সঞ্চয় বর্ণনা করেন।
এ ছাড়া কিছু কাজ করতে গেলে টিআইএন (TIN) লাগে। যেমন, জমি, ফ্ল্যাট, গাড়ি বা সঞ্চয়পত্র কিনতে হলে কিংবা বিদেশে যেতে হলে ই-টিন/TIN/E-TIN এর প্রয়োজন হয়। আবার বিদ্যুৎ-সংযোগ নিতেও টিআইএন লাগবে। কিংবা আপনি গাড়ি কিনেছেন, টিআইএন ছাড়া গাড়ির নিবন্ধন নিতে পারবেন না। এমনকি আপনি ব্যাংকে এফডিআর করেছেন, টিআইএনের কপি ওই ব্যাংকে জমা দিলে এফডিআরের সুদের ওপর ৫ শতাংশ কম আয়কর কাটবে। সুদের ওপর ১৫ শতাংশের পরিবর্তে ১০ শতাংশ উৎসে কর ধরা হবে। বর্তমানে ই-টিন বা ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর ছাড়া আমাদের অধিকাংশ আর্থিক কার্যক্রম সম্পন্ন করা কঠিন হয়ে পড়ে।
টিন কেন প্রয়োজন? *
- আমদানি করার ক্ষেত্রে আমদানিপত্র রেজিস্ট্রেশন করার জন্য।
- বিভাগীয় জেলা শহর অথবা পৌরসভায় ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করার জন্য।
- মাল সরবরাহ, চুক্তিনামা অথবা অন্যান্য যেকোনো বাণিজ্যের দরপত্রের জন্য।
- সাধারণ বীমা তালিকাভুক্তকরণ অথবা লাইসেন্স নবায়ন করার জন্য।
- এক লাখ টাকার ওপরে সিটি করপোরেশনভুক্ত অঞ্চলে যেকোনো জমি বা ভবন রেজিস্ট্রেশনের জন্য।
- ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করার ক্ষেত্রে।
- কোম্পানি রেজিস্ট্রেশনের জন্য।
- ড্রাগ লাইসেন্সের জন্য।
- যেকোনো ব্যবসায়িক সমিতির সদস্য হওয়ার জন্য কিংবা সদস্যপদ নবায়ন করার জন্য।
- আইএসডি টেলিফোন সংযোগের জন্য।
- মুসলিম বিবাহ ও তালাকনামা রেজিস্ট্রেশনের জন্য।
- কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা জমা দেওয়ার জন্য।
- গাড়ি, জিপ অথবা মাইক্রোবাসের রেজিস্ট্রেশন কিংবা মালিকানা পরিবর্তন ও ফিটনেস লাইসেন্সের জন্য।
- কোনো ব্যক্তির কমার্শিয়াল ব্যাংক অথবা লিজিং কম্পানি থেকে ঋণ গ্রহণ অথবা ঋণ অনুমোদনের জন্য।
আয়কর রিটার্ন কী? আয়কর কর্তৃপক্ষের নিকট বাৎসরিক আয়ের সংক্ষিপ্ত বিবরণ উপস্থাপন করার মাধ্যম হচ্ছে আয়কর রিটার্ন। আয়কর রিটার্ন-এর কাঠামো আয়কর বিধি দ্বারা নির্দিষ্ট করা আছে। আয়কর আইন অনুযায়ী জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কতৃর্ক নির্ধারিত ফরমে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হয়।
বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী যাদের ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর বা টিআইএন রয়েছে তাদের জন্য আয়কর রিটার্ন দাখিল করা বাধ্যতামূলক। সেটি না করলে জরিমানা করার বিধান রয়েছে। নিয়মানুযায়ী যাদের বেসিক ১৬,০০০ টাকা বা তদূর্ধ্ব তাদের সবাইকে পরবর্তী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করতে হবে। তবে রিটার্ন দাখিল করা এবং আয়কর/ইনকাম ট্যাক্স পরিশোধ করা এক জিনিস নয়। উল্লেখিত বেসিক বেতনের আওতাধীন সবাইকে রিটার্ন দাখিল করতে হয়; কিন্তু তাদের আয় যদি করসীমা অতিক্রম না করে তাহলে আয়ের উপর আয়কর বা ইনকাম ট্যাক্স দিতে হবে না, শুধুমাত্র রিটার্ন দাখিল করলেই চলবে। আয় যদি করসীমা অতিক্রম করে তাহলেই কেবল আয়কর দিতে হবে।
কোনো ব্যক্তি আয়কর রিটার্ন দাখিল করার যোগ্য কি না তা আমরা দুটি টেস্টের মাধ্যমে সহজেই জানতে পারি—
১. ব্যক্তির করযোগ্য আয় আছে কিনা; অর্থাৎ কোনো ব্যক্তির যদি করযোগ্য আয় থাকে তাহলে তার ই-টিন তৈরি করে অবশ্যই আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, কোনো পুরুষ যদি বছরে তিন লাখ টাকার বেশি আয় করে এবং নারী, তৃতীয় লিঙ্গ ও ৬৫ বছর ঊর্ধ্ব বয়সীয় আয় তিন লাখ ৫০ হাজার টাকার বেশি হলে অবশ্যই রিটার্ন দাখিল করতে হবে। এছাড়া গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা করদাতার আয় যদি বছরে ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকার বেশি হয় এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকার বেশি আয় হয় তাহলে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে।
২. কোনো ব্যক্তির করযোগ্য আয় থাকুক বা না থাকুক তাদের ই-টিন করতে হবে এবং অবশ্যই আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে। এক্ষেত্রে আমরা এসব ব্যক্তিদের নিম্নোক্তভাবে শ্রেণিবিন্যাস করতে পারি।
যাঁদের রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক:
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বেশ কিছু ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করে দিয়েছে। যেমন:
১. এবারে যারা রিটার্ন দাখিল করবে, তাদের আয় বছর হচ্ছে ২০১৯-২০। এ আগের তিন বছরের যেকোনো বছরে যদি কর নির্ধারণ হয়ে থাকে, তাহলেও রিটার্ন দিতে হবে।
২. কোনো কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার পরিচালক বা শেয়ারহোল্ডারের কর্মচারী হলে।
৩. কোনো ফার্মের অংশীদার হলে।
৪. সরকার অথবা সরকারের কোনো কর্তৃপক্ষ, করপোরেশন বা ইউনিটের কর্মচারী হিসেবে যদি ১৬ হাজার টাকা বা এর বেশি মূল বেতন পান।
৫. কোনো ব্যবসায় বা পেশায় নির্বাহী বা ব্যবস্থাপনা পদে বেতনভোগী কর্মী হলে।
৬. আয়কর অব্যাহতি পেলেও হ্রাসকৃত হারে করযোগ্য হলে।
৭. মোটরগাড়ির মালিক হলে (জিপ বা মাইক্রোবাসকেও বোঝাবে)।
৮. কোনো সিটি করপোরেশন, পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে কোনো ব্যবসা বা পেশা পরিচালনা করলে।
৯. মূল্য সংযোজন কর আইনের অধীন নিবন্ধিত কোনো ক্লাবের সদস্যপদ থাকলে।
১০. চিকিৎসক, দন্ত চিকিৎসক, আইনজীবী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্ট, প্রকৌশলী, স্থপতি অথবা সার্ভেয়ার হিসেবে বা সমজাতীয় পেশাজীবী হিসেবে কোনো স্বীকৃত পেশাজীবী সংস্থার নিবন্ধিত হলে।
১১. আয়কর পেশাজীবী হিসেবে এনবিআরে নিবন্ধিত হলে।
১২. কোনো বণিক বা শিল্পবিষয়ক চেম্বার অথবা ব্যবসায়িক সংঘ বা সংস্থার সদস্য হলে
১৩. কোনো পৌরসভা বা সিটি করপোরেশনের কোনো পদে বা সাংসদ পদে প্রার্থী হলে
১৪. কোনো সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা কোনো স্থানীয় সরকারের কোনো টেন্ডারে অংশগ্রহণ করলে।
১৫. কোনো কোম্পানির বা কোনো গ্রুপ অব কোম্পানিজের পরিচালনা পর্ষদে থাকলে।
১৬. মোটরযান, স্পেস বা স্থান, বাসস্থান অথবা অন্যান্য সম্পদের মাধ্যমে অংশগ্রহণমূলক অর্থনৈতিক কাজে যুক্ত থাকেন (যেমন উবারে গাড়ি দেওয়া) এবং
১৭. লাইসেন্সধারী অস্ত্রের মালিক হলে।
করমুক্ত আয়: কিছু কিছু আয় আছে, যা করমুক্ত। এসব আয়ের বিপরীতে কর তো দিতেই হয় না, উল্টো কর অব্যাহতি সুবিধা পাওয়া যায়। চলুন, জেনে নেওয়া যাক সেসব আয় সম্পর্কে:
১. সরকারি চাকরিজীবী করদাতা যদি চাকরির দায়িত্ব পালনের জন্য কোনো বিশেষ সরকারি ভাতা, সুবিধা বা আনুতোষিক পান;
২. সরকারি বা অনুমোদিত পেনশন;
৩. অংশীদারি ফার্ম হতে পাওয়া মূলধনি মুনাফার অংশ;
৪. ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত সরকারি বা অনুমোদিত গ্র্যাচুইটি প্রাপ্তি;
৫. প্রভিডেন্ট ফান্ড অ্যাক্ট, ১৯২৫ অনুযায়ী উক্ত ফান্ড থেকে প্রাপ্ত অর্থ;
৬. স্বীকৃত প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে প্রাপ্ত অর্থ;
৭. স্বীকৃত সুপার এ্যানুয়েশন ফান্ড থেকে প্রাপ্ত অর্থ;
৮. বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ (২০০৬ সালের ৪২ নম্বর আইন)–এর আওতায় প্রতিষ্ঠিত ওয়ার্কার্স পার্টিসিপেশন ফান্ড থেকে ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত প্রাপ্ত অর্থ;
৯. মিউচুয়াল ফান্ড অথবা ইউনিট ফান্ড থেকে ২৫,০০০ টাকা পর্যন্ত আয় (সুদ, মুনাফা বা ডিভিডেন্ড);
১০. স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানি থেকে নগদ লভ্যাংশ বাবদ ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত আয়;
১১. সরকারি নিরাপত্তা জামানতের সুদ, যা সরকার করমুক্ত বলে ঘোষণা করেছে;
১২. রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলাগুলোতে পরিচালিত আর্থিক কর্মকাণ্ডের ফলে প্রাপ্ত আয়;
১৩. আয়কর অধ্যাদেশের আওতায় জারি করা কোনো প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, কর অব্যাহতি বা হ্রাসকৃত করহারের সুবিধা গ্রহণকারী করদাতা ব্যতীত অন্যান্য করদাতার রপ্তানি থেকে প্রাপ্ত আয়ের ৫০%;
১৪. আয়ের একমাত্র উৎস ‘কৃষি খাত’ হলে, এ খাত থেকে আয়ের ২,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত;
১৫. সফটওয়্যার তৈরিসহ তথ্যপ্রযুক্তি–সংশ্লিষ্ট কয়েকটি খাতের ব্যবসার আয়। খাতগুলো হচ্ছে: সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, সফটওয়্যার অথবা অ্যাপ্লিকেশন কাস্টমাইজেশন, নেশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন), ডিজিটাল কনটেন্ট ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট, ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট, ওয়েবসাইট সার্ভিসেস, ওয়েব লিস্টিং, আইটি প্রসেস আউটসোর্সিং, ওয়েবসাইট হোস্টিং, সাইবার সিকিউরিটি সার্ভিসেস ইত্যাদি।
১৬. হাঁস-মুরগির খামার থেকে অর্জিত আয়ের ক্ষেত্রে প্রথম ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত ‘শূন্য’ হারে, পরবর্তী ১০ লাখ টাকা আয়ের ওপর ৫% হারে এবং অবশিষ্ট আয়ের ওপর ১০% হারে কর প্রদেয়।
১৭. হাঁস-মুরগি, চিংড়ি ও মাছের হ্যাচারি এবং মৎস্য চাষ থেকে অর্জিত আয়ের ক্ষেত্রে প্রথম ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ‘শূন্য’ হারে। পরবর্তী ১০ লাখ টাকা আয়ের ওপর ৫% হারে এবং পরবর্তী ১০ লাখ টাকা আয়ের ওপর ১০% হারে এবং অবশিষ্ট আয়ের ওপর ১৫% হারে কর প্রদেয় হবে।
১৮. কতিপয় ক্ষেত্র ব্যতীত ব্যক্তি করদাতার স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার বিক্রয় থেকে অর্জিত মূলধনি মুনাফা;
১৯. হস্তশিল্পজাত দ্রব্যাদি রপ্তানি থেকে উদ্ভূত আয়;
২০. জিরো কুপন বন্ড থেকে উদ্ধৃত আয়;
২১. ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ড, ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড, ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড, পাউন্ড স্টারলিং প্রিমিয়াম বন্ড, পাউন্ড স্টারলিং ইনভেস্টমেন্ট বন্ড ইউরো প্রিমিয়াম বন্ড ও ইউরো ইনভেস্টমেন্ট বন্ড থেকে প্রাপ্ত সুদ আয়;
২২. পেনশনার সঞ্চয়পত্র থেকে প্রাপ্ত সুদ (কোনো করদাতার পেনশনার সঞ্চয়পত্রে পুঞ্জীভূত বিনিয়োগের পরিমাণ ৫ লাখ টাকা অতিক্রম না করলে);
২৩. বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে প্রাপ্ত সম্মানী বা ভাতা কিংবা সরকারের দেওয়া কল্যাণ ভাতা;
২৪. সরকারের কাছ থেকে পাওয়া কোনো পদক/পুরস্কার; এবং
২৫. কোনো এলডারলি কেয়ার হোম পরিচালনা থেকে অর্জিত আয়;
২৬. বাংলাদেশের কোনো নাগরিক বাংলাদেশের বাইরে উপার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা আইনানুগ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বাংলাদেশে আনয়ন করলে উক্ত বাংলাদেশি নাগরিকের বিদেশে উপার্জিত আয়।
করমুক্ত আয় সমূহ করদাতার মোট আয়ের অন্তর্ভুক্ত হবে না। এটি রিটার্নে করমুক্ত আয়ের কলামে প্রদর্শন করতে হবে।
রিটার্ন দাখিলের সময়সীমা: আমাদের আয়-বর্ষ জুলাই থেকে জুন পর্যন্ত। এরপর থেকেই অর্থাৎ জুলাই মাসের ১ তারিখ থেকেই আয়কর বিবরণী দাখিল করা শুরু হয়ে যায়। টানা চলতে থাকে কর দিবস পর্যন্ত। বাংলাদেশে কর দিবস পালিত হয় ৩০ নভেম্বর। অর্থাৎ ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত যে কোনো ব্যক্তি-করদাতা তার আয়কর বিবরণী দাখিল করতে পারবেন। আপনার আয়কর রিটার্ন আপনি রাজস্ববোর্ডের অন্তর্গত কোন সার্কেল অফিসে, বা আয়কর মেলায় গিয়ে কিংবা ঘরে বসে অনলাইনে জমা দিতে পারেন।
আয়কর হিসাব: আয়কর হিসাব বের করা পানির মত সহজ নয়। আয়কর নির্ণয়ের ক্ষেত্রে একটু হিসাব নিকাশ এবং অঙ্ক করার প্রয়োজন হয়। সাধারনত ব্যক্তি শেনীর কর দাতার ক্ষেত্রে কর হারের কাঠামো হলো:
মোট আয় কর হার—
(ক) প্রথম ২,৫০,০০০/- টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের উপর শূণ্য
(খ) পরবর্তী ৪,০০,০০০/- টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের উপর ১০%
(গ) পরবর্তী ৫,০০,০০/- টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের উপর ১৫%
(ঘ) পরবর্তী ৬,০০,০০০/- টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের উপর ২০%
(ঙ) পরবর্তী ৩০,০০,০০০/- টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের উপর ২৫%
(চ) অবশিষ্ট মোট আয়ের উপর ৩০%
এরপর আপনাকে বের করতে হবে, কোন কোন আয়ের কর দেওয়া লাগবে, কত টাকা বা কত শতাংশ দেওয়া লাগবে। আয়কর একেক ক্ষেত্রে একেক রকম হয়ে থাকে। চাকুরিজীবীর একরকম তো ব্যবসায়ীর অন্যরকম, আবার কোম্পানী এবং আর্টিফিসিয়াল/লিগ্যাল পার্সোনের অন্যরকম।
রিটার্ন কোথায় দাখিল করতে হয়: প্রতিটি শ্রেণির করদাতার রিটার্ন দাখিলের জন্য আয়কর সার্কেল নির্দিষ্ট করা আছে। যেমন ঢাকা জেলায় অবস্থিত সব বেসামরিক সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারী ও পেনশনভুক্ত কর্মকর্তা/কর্মচারীর নাম ‘এ’ ‘বি’ ‘সি’ অক্ষর দিয়ে শুরু হয়েছে, তাঁদের ডাকা কর অঞ্চল-৪–এর কর সার্কেল-৭১–এ রিটার্ন জমা দিতে হবে। পুরোনো করদাতারা বর্তমান সার্কেলে রিটার্ন জমা দেবেন। নতুন করদাতারা তাঁদের নাম, চাকুরিস্থল বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ঠিকানার ভিত্তিতে নির্ধারিত সার্কেলে টিআইএন উল্লেখ করে আয়কর রিটার্ন দাখিল করবেন।
রিটার্ন দাখিলের সময় অনেকে বিদেশে অবস্থান করলে সেখানকার বাংলাদেশ দূতাবাসেও রিটার্ন দাখিল করা যায়। আবার কোনো সরকারি কর্মকর্তা প্রেষণে বা ছুটিতে উচ্চশিক্ষা বা প্রশিক্ষণের জন্য বিদেশে থাকলে বা লিয়েনে বাংলাদেশের বাইরে থাকলে, প্রেষণ বা লিয়েন শেষ করে দেশে আসার তিন মাসের মধ্যে সব রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন।
আমাদের ট্যাক্স সেবাসমূহ:
- ইনকাম ট্যাক্স সংক্রান্ত সকল পরামর্শ
- ই-টিন সার্টিফিকেটের ব্যবস্থা করা
- হারিয়ে যাওয়া ই-টিন পুনরুদ্ধার সেবা
- আয়কর রিটার্ণ ফরম পূরণ
- ট্যাক্স এ্যাসেসমেন্ট করা
- ব্যক্তি ও কোম্পানি করদাতার কর পরিকল্পনা করা